1. [email protected] : Renex Lab : Renex Lab
  2. [email protected] : Shuvo Khan : Shuvo Khan
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার কোনো হিসাব নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটাপথ, খাবারের দোকানসহ নানান স্থাপনা তৈরির সময় কোনো গাছ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, তা কেটে ফেলা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এসব উন্নয়নকাজের জন্য কত গাছ কাটা হয়েছে বা কাটতে হবে, সে হিসাব নেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে। ১৯৯৮ সালে প্রকল্পটির শুরু থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে কত গাছ কাটা হলো, সে তথ্যও পাওয়া যায়নি।

তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, পরিকল্পিত সবুজায়নের অংশ হিসেবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ কাটা হলেও নতুন করে ফুল গাছ লাগানো হবে। সারা বছরই ফুটবে নানান ফুল। ফুল গাছের পরিচর্যায় মালি থাকবে। ঘাসে পা না দিয়েই মানুষ যাতে হাঁটতে পারে, তাই হাঁটাপথের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। লোকজনের বিশ্রামের জন্য বিভিন্ন নকশার বেঞ্চ তৈরি করা হবে। এতে কিছু গাছ কাটা যেতেই পারে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনসমাগম হলে মানুষ যাতে উন্নত মানের খাবার পায়, তাই উদ্যানে সাতটি ফুড কিয়স্ক তৈরি করা হচ্ছে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীসহ সবার প্রয়োজন অনুযায়ী শৌচাগার, বৃষ্টি হলে শেডের নিচে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা এবং টিকিট কাউন্টার হচ্ছে একই ছাদের নিচে।

পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গাছ কেটে খাবারের দোকান বা অন্যান্য স্থাপনা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যে যার মতো করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। নগরবিদদের দেওয়া হিসাব বলছে, প্রতিটি বড় শহরে ২০ শতাংশ সবুজ স্থান থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কাগজে-কলমে নতুন ঢাকায় আছে ১২ আর পুরান ঢাকায় ৫ শতাংশ। বাস্তবে তার পরিমাণ আরও কম।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগে ছিল রেসকোর্স ময়দান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই রেসকোর্স ময়দানেই লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’—ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল এখানেই। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুহৃদ ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরকালে এই রেসকোর্স ময়দানেই ভাষণ দিয়েছিলেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি ঐতিহাসিক সম্পত্তি, সাংবিধানিকভাবে এটি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যতটা সম্ভব অক্ষত রাখতে হবে। স্থাপনা হতেই পারে, তবে তা চারদিকে ছড়িয়ে করতে হবে। ঢাকা শহরের পার্ক ও গাছপালা রক্ষায় বিভিন্ন সময় আমাদের মতামত দিয়েছি। বেশির ভাগ সময়ই মতামতের ধার ধারে না।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায়ের নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তর। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং ৫০০টি, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটাপথ, আন্ডারপাস, মসজিদ, অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়ন, খাবারের দোকান, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য এবং যেখানে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল, সেখানেও একটি ভাস্কর্য তৈরি, ইন্দিরা মঞ্চ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের এ পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ প্রিয়দেশ
Theme Customized BY LatestNews