1. [email protected] : Renex Lab : Renex Lab
  2. [email protected] : Shuvo Khan : Shuvo Khan
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী, ঘরছাড়া ৩৫ হাজার পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঘরে পানি থাকায় ৩৫ হাজার পরিবার বাঁধ, উঁচু স্থান ও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে এবং এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে সাত সহস্রাধিক চিংড়ি ঘেরের মাছ। এতে ঘেরমালিকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ঘরে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় পানিবন্দী অনেক পরিবার অর্ধাহার–অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার বাঁধ ভেঙে ও উপচে যেসব এলাকায় পানি ঢুকেছিল, তার মধ্যে কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে শ্যামনগরের সাতটি ও আশাশুনির ছয়টি এলাকায় বাঁধ মেরামত করা যায়নি। ফলে এসব এলাকা দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ১৫-১৬টি গ্রামে জোয়ারের পানি ওঠানামা করছে।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ২০–২৫ হাজার পরিবারের ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাঁধ ও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু পরিবার ঘরের মালামাল নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রহমান গাজী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধ ভেঙে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের। মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

নেবুবুনিয়া গ্রামের রহিম গাজী জানান, বেঁড়িবাধ ভেঙে পুরো এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঘরের মধ্যে পানিবন্দী অবস্থায় দিনরাত কাটছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের কালিদাস মণ্ডল জানান, ইয়াসের মাত্র মাসখানেক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। আবার ইয়াসের জোয়ারের পানিতে সব ভেসে গেছে। তাঁরসহ অনেক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান গাইন বলেন, মথুরেশপুরের হাড়দাহ, বসন্তপুর, হোসেনপুর, চাকদা এলাকার চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে।

হাড়দাহ গ্রামের ইমরান আলী জানান, তিনিসহ এলাকার কয়েক শ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাঁর চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। চিংড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার রাতে ৮০টি পরিবার আশ্রয় নেয়। গতকাল সকালে ছিল ১৭টি পরিবার।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, জোয়ারের পানির চাপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ১২-১৩টি স্থান ভেঙে গিয়েছিল। চারটি স্থান দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হলেও কুড়িকাউনিয়া, হরিশখালি, বন্যাতলা ও দীঘলার আইটের নয়টি স্থান দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়নি। এসব বাঁধ সংস্কার করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আম্পানের পর অনেকে এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নতুন করে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কেউ নৌকায়, আবার কেউ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের আলমগীর হোসেন ও মরিয়ম বেগম জানান, আর কোনো উপায় না থাকায় তাঁরা নৌকায় অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। চিংড়ি ঘেরও ভেসে গেছে।

একই এলাকায় ফারুমা ও আবদুল মান্নান গাজী জানান, তাঁদের আম্পানে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। প্রায় ১০ মাস পরে বাড়িতে ফিরেছিলেন। ঘর ঠিক করতে না করতেই আবার ইয়াস আঘাত হেনেছে। যদি এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ না দেওয়া যায়, তাহলে এলাকাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ প্রিয়দেশ
Theme Customized BY LatestNews