চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরেও পুলিশের চেকপোস্টে হয়রানির শিকার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের একজন মেডিক্যাল অফিসার। কৃষ্ণা হালদার নামের ওই মেডিক্যাল অফিসার ফেসবুকে নিজের ‘বিব্রতকর’ অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছেন। ঠিকই একই অভিযোগ করেছেন আরেকজন চিকিৎসক। যিনি রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে মুন্সীগঞ্জ থেকে যাওয়ার পথে জরিমানার শিকার হন বলেও ফেসবুকে লিখেছেন।
কৃষ্ণা হালদারের পোস্ট অনুযায়ী ‘গতরাতে কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে আমার নাইট শিফটে ডিউটি ছিল। সকালে আমাকে আমার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার পিক আপ করার সময় কারওয়ানবাজার সিগনালে ড্রাইভার আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরেও পুলিশ মামলা করেছে (বি. দ্র. আইডি কার্ড ছুড়ে মারা হয়েছে, পুলিশ আমার সাথে ফোনে কথা বলতে রাজি হয়নি তখন, আমি দেখা করে জিজ্ঞেস করাতে পরে সব অস্বীকার করেছে পুলিশ) ফাইন করেছে, সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে গেছে এবং পরবর্তীতে আমি তেজগাঁ থানা ও ট্রাফিকের ডিবি পুলিশের কার্যালয় গেলেও কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি। বারবার চেষ্টা করেও মুভমেন্ট পাস বের করতে পারিনি। এমতাবস্থায় কভিড ডিউটি করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
আরেকজন নারী চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন তার স্বামী হাসপাতালে যাওয়ার পথে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে ফেসবুকে লিখেছেন। তাঁর স্বামীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন-
গতকাল সবার মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার ব্যাপার একটু সন্দেহ ছিল। আমরাও যথারীতি উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আমার হাসব্যান্ড স্কয়ার হসপিটালের কভিড ইউনিটে কর্তব্যরত আছেন। আজকে সকাল ৮টা থেকে তার ডিউটি ছিল। আমাদের বাসায় আমার শশুর কভিড পজেটিভ হওয়ায় আমার হাসবেন্ড বাসা(মুন্সীগন্জ) থেকে নিজেদের গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন যাবৎ। গতকাল মুভমেন্ট পাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করছিলা আর গ্রুপের পোস্টগুলো দেখছিলাম আাসলে কি করা যায় সে ব্যাপারে।
অনেকেই পজেটিভ কথাবার্তা লিখল যে ডাক্তারদের লাগবে না। কিন্তু আজ সকালে আমাদের গাড়ি সাইনবোর্ডের একটু পরে থামায় এবং ৩০০০ টাকা জরিমানা করে। আমার হাসব্যান্ডের সাথে তার কর্মস্থলের আইডি কার্ড ছিল। স্কয়ার হসপিটালের ট্রান্সপোর্ট অবশ্যই মুন্সীগন্জ আসবে না। আর হঠাৎ করে একটা অ্যাপ বানিয়ে বলল নেন মুভমেন্ট পাস নামক সার্কাস নিয়া বাইর বের হবেন যেখানে তাদের ওয়েবসাইটেই ঢোকাই যায় না। এমতাবস্থায় ডাক্তাররা কি সারাদিন ডিউটি বাদ দিয়ে পাস পাস খেলবে নাকি?
কৃষ্ণা হালদার লিখেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে আজ দেশজুড়ে ৮ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত জনগণকে চলাচলে বিধি-নিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে রয়েছেন সিভিল প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ‘কঠোর লকডাউন’ কার্যকর করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তৎপর রয়েছে।
বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে আসতে দেওয়া হবে না বলে জানায় পুলিশ। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, চিকিৎসকরা বিধি-নিষেধের বাইরে থাকবে। কিন্তু অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা। এনিয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।