1. [email protected] : Renex Lab : Renex Lab
  2. [email protected] : Shuvo Khan : Shuvo Khan
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

মরার ওপর খাঁড়ার ঘা : করোনা-লকডাউনে বন্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১

তিস্তা উত্তাল হয়ে উঠেছে উজান থেকে আসা ঢলে। এতে রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে দুই ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার পরিবার। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ১৭ পরিবারের ঘরবাড়ি। তিস্তাপারে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, আতঙ্কে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে লোকজন।

জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতের ১১ জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পানি ধরে রাখতে না পেরে তিস্তার উৎস মুখে খুলে দেওয়া হয় গজলডোবা ব্যারাজের গেট। বুধবার দুপুরে তিস্তার অসংরক্ষিত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় জারি করা হয় লাল সংকেত। তিস্তা নদীর দোমহনী থেকে এদেশিয় ভূখন্ড পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারে জারি থাকে হলুদ সংকেত। নদীতে পানি ছাড়া হয় এক লাখ ২৭ হাজার কিউসেক। এই পানি মাত্র ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হওয়ায় রূপ নেয় বন্যায়। যদিও আজ শুক্রবার দুপুরে গজলডোবা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ তাদের লাল ও হলুদ সংকেত তুলে নেয়।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজানের ঢলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। রাত ৯টার দিকে ওই পয়েন্ট বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও দুপুরে তা বিপৎসীমা পর্যন্ত নেমে আসে।

স্থানীয়রা জানান, গঙ্গাচড়ার বিনবিনা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ছিল। গত বছর বন্যায় তা ভেঙে তিস্তার স্রোতে গতি পরিবর্তন করে। এতে বন্যা ও ভাঙনের শিকার হয় কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে কোন সমাধান না পেয়ে বাধ্য হয়ে চলতি বছর কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে। লক্ষীটারী কেল্লারপার চরেও স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যাতে তিস্তার মূল গতিপথ শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ওই বাঁধ ভেঙে এবারও তিস্তা ভিন্ন পথে চলতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে আজ শুক্রবার দুপুরে বন্যা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীব্র স্রোতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বিনবিনা এলাকার বাঁধটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে এবং কেল্লারপার এলাকায় পূর্ব বিনবিনা চর হতে লক্ষীটারীর পশ্চিম ইচলী সংযোগ বাঁধটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর, আউলিয়ার হাট, চিলাখাল, মটুকপুর, পূর্ব বিনবিনা, লক্ষীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট আশ্রয়নসহ শংকরদহ, পশ্চিম ইছলী এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া নদী ভঙনে ১৭ পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হল রহেদুল ইসলাম, মহুব আলী, রুহুল আমিন, গোলাম রব্বানী, আতিয়ার রহমান, তৈয়ব আলী, আনোয়ারুল ইসলাম, আহাম্মদ আলী, দুলু মিয়া, মোহাম্মদ আলী, মাছুম আলী, আশরাফুল ইসলাম, নওশা মিয়া, আইয়ুব দুলু, আজিজুল ইসলাম, আব্দুর রব দুলু ও দুলাল মিয়া।

এদিকে চরের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পানিবন্দি মানুষগুলো রাস্তাসহ উঁচু স্থানে পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও ঘরের আসবাবপত্রসহ আশ্রয় নিয়েছে। ভাসমান চুলায় একবার কোনরকমে রান্না করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। বন্যা এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

পশ্চিম ইচলীর ফজলু মিয়া, নুরুল ইসলাম, মতিবার রহমান, বাগেরহাট আশ্রয়ন এলাকার বাসিন্দা সজিনা বেগম, মাজেদা খাতুন, বিনবিনা চরে মনতাজ আলী, ও আব্দুল মান্নান বলেন, ‘করোনায় এমনে কাম-কাজ নাই। তার ওপর বন্যা-নদী ভাঙনে হামারগুলার (আমাদের) বাঁচি থাকা দায় হয়া পড়ছে।’

লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নের তিন হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত রয়েছে ভাঙন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিন হাজার পরিবার। সাত পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে আরও বেশকিছু পরিবার। আতঙ্কে অনেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম জানান, পানিবন্দি পরিবারের জন্য ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গঙ্গাচড়ায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে যে বাঁধটি বানিয়েছিল তা ছিল অপরিকল্পিত, তাই ভেঙে গেছে। তবে ওই এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আকস্মিক উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে পানি কমবে।

আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ প্রিয়দেশ
Theme Customized BY LatestNews