1. [email protected] : Renex Lab : Renex Lab
  2. [email protected] : Shuvo Khan : Shuvo Khan
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

তাহের হত্যা: মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৫৫) ও জাহাঙ্গীর আলমের (৩৫) ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কারাবিধি অনুযায়ী দুজনের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া। দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ আলমগীর হোসেন। তাকে সহায়তা করেন আরও সাত জল্লাদ।

ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জানদি গ্রামে। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার খোজাপুর মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ফাঁসি কার্যকরের পর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। কারা কর্তৃপক্ষের দুটি পৃথক অ্যাম্বুলেন্সে মহিউদ্দিনের মরদেহ ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও জাহাঙ্গীরের মরদেহ তার বাড়ি খোজাপুর মধ্যপাড়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে, এর আগে আজ সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়। দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা এলাকার রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কারাগার এলাকায় অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্তত ১৫ দিন আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। মৃত্যুকূপটি দীর্ঘদিনের পুরনো। তাই তারা এটি সংস্কার করে। কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেয়ালের পাশে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চটি। এছাড়া যে দঁড়িতে ঝুলানো হবে, সে দঁড়িতে আসামিদের তিন গুণ ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাঁসির দঁড়িটিও চূড়ান্ত করা হয়। প্রথমে ১৭ জন কয়েদিকে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষে বিবেচনায় আটজনকে চূড়ান্ত করা হয়।

চূড়ান্ত হওয়া জল্লাদরা হলেন আলমগীর, নাজমুল, সুমন, উজ্জ্বল, নাসির, মজনু, আশরাফুল ও রিয়াজুল। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীর হোসেন। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। আলমগীর এর আগেও জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। জল্লাদ দলের দুইজন নতুন সদস্য ছিলেন। উজ্জ্বল পুঠিয়ার আলোচিত মহিমা ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে টিম প্রধান হ্যান্ডেল টেনে ফাঁসি কার্যকর করেন। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজন দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। আর দুইজন তাদের কালো কাপড়ের জম টুপি ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দেন। এর আগে সকাল থেকে মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের কয়েক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কারা কর্তৃপক্ষ।

ফাঁসি কার্যকরের সময় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কারাগারে প্রস্তুত রাখা হয় মরদেহ বহনের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স। তবে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধে তাদের পরিবারকে চিঠি দিয়ে আগেই জানিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল জানিয়েছেন, কারাবিধি মোতাবেক ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাত করেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৪০ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রীসহ তার পরিবারের চার সদস্য।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় তার গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে।

২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।

পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।

আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ প্রিয়দেশ
Theme Customized BY LatestNews