1. [email protected] : Renex Lab : Renex Lab
  2. [email protected] : Shuvo Khan : Shuvo Khan
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কেন হয়, কী করবেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

মানুষের জটিল রোগগুলোর মধ্যে আর্থ্রাইটিস অন্যতম। আর্থ্রাইটিস হচ্ছে— হাড় অথবা হাড়ের জোড়ায় প্রদাহ। বাংলায় এটিকে বাত বলা হয়।

আর্থ্রাইটিস ব্যথা কেন হয়, হলে কী করতে হবে— এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিক আহমেদ।

আর্থ্রাইটিস হওয়ার অন্যতম কারণ বয়োবৃদ্ধি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুণাস্থিতে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমতে থাকে। সে জন্য তরুণাস্থিও ক্ষয় হতে থাকে। শারীরিক ওজন বেশি থাকলে বিভিন্ন জয়েন্টের ওপর বেশি চাপ পড়ার কারণে এ রোগ হতে পারে। জন্মসূত্রে কারও কারও এ রোগ হতে পারে।

আমাদের মেরুদণ্ড অনেক ছোট ছোট কশেরুকা দ্বারা গঠিত। স্পনডিলাইটিস হলো মেরুদণ্ডের কশেরুকার প্রদাহ। এ রোগের উপসর্গ হলো ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, কোমরে, বা মাজায় অসহ্য ব্যথা। ঘাড় ঘোরাতে, শরীর বাঁকাতে এবং হাঁটাচলা করতে প্রচণ্ড অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়া হালকা জ্বর, ক্ষুধামন্দা এবং ওজন হ্রাস পাওয়া হচ্ছে এ রোগের উপসর্গ।

সাধারণত বয়স ৩০ বছর হলে আর্থ্রাইটিস হয়। যারা অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করেন এবং অতিরিক্ত টেনশন যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বংশগত কারণেও হতে পারে।

যারা অতিরিক্ত মদ্যপান করে তাদেরও বাত হতে পারে। এ ছাড়া যেসব খাবারে পিউরিন বেশি থাকে সেসব খাবার বেশি খেলে গাউট হতে পারে। কিডনি বিকল রোগ, ডাইউরেটিক জাতীয় ওষুধ সেবন, টিবি রোগের ওষুধ সেবন এবং আরও অন্যান্য রোগের কারণেও গাউট হতে পারে।

বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতেই হবে। যেমন— লাল মাংস-গরু, খাসি, মহিষ, ভেড়া, হরিণের মাংস না খাওয়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঘি, মাখন চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া। গাজর, মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, কলিজা, মগজ, কই মাছ, ইলিশ মাছ, গুঁড়া মাছ, পুঁইশাক, পালংশাক ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

যাদের বংশে আর্থ্রাইটিসের রোগী আছে, তাদের উপরোক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার না খাওয়া উত্তম। শরীর ব্যথা, বাতের ব্যথা, অনেকেই না জেনে, না বুঝে ওষুধের দোকানদারের নিকট থেকে বেদনানাশক ওষুধ কিনে খাচ্ছেন মোয়া-মুড়কির মতো।

এই ওষুধ ২-৪-১০ দিন খাওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই মাসের পর মাস খাওয়া যাবে না। দীর্ঘমেয়াদি বেদনানাশক ওষুধ সেবনে কিডনি বিকল রোগ হয়। উচ্চ রক্তচাপের জন্ম হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সেবন করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

বেদনানাশক ওষুধ সেবনই আর্থ্রাইটিস চিকিৎসার মূল কথা নয়। অনেক সময় অর্থপেডিক (হাড় ও জোড়া রোগ বিশেষজ্ঞ) সার্জন, নিউরোমেডিসিন ও নিউরোসার্জনের পরামর্শের প্রয়োজন হয়। প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজেই ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ক্লিনিকগুলোতেও ফিজিওথেরাপি বিভাগ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রোগের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ‘রে’-যেটিকে সাধারণ লোকজন বলেন সেঁক দেওয়া।

সর্বোপরি আছে এক এক অঙ্গের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের ব্যায়াম। আপনার যদি কোমর ব্যথা হয় তার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম, যদি ঘাড় ব্যথা হয় তার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম, যা কিনা রোগের ধরন ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে দেয়া হয়। আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিহার্য।

আর্থ্রাইটিস নিয়েও সুস্থ থাকার ৭টি উপায়

* ব্যায়াম করাকে একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করুন।
* ব্যথার ওষুধ বেশি ব্যবহার না করে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করুন।
* মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন।
* অতিরিক্ত বিশ্রামের পরিবর্তে কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন।
* অবসর সময় প্রিয়জনের সঙ্গে অতিবাহিত করুন।
* যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* আপনার রোগের ধরন এবং নিরাময় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।

যে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন
* নরম গদি-তোশক এবং উঁচু বালিশ বেশি ব্যবহার করবেন না।
* দেহের মেদ কমান-পুষ্টিকর খাবার খান।
* টেনশন কমান।
* প্রতিদিনই হালকা কিছু ব্যায়াম করুন।
* টেবিলে বসে ঝুঁকে পড়াশোনা করবেন না।
* নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করুন।
* শীতকালে ঠাণ্ডায় এবং বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বয়স্করা সাবধানে থাকবেন।
* চিকিৎসকের পরামর্শমতো দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং ওষুধ সেবন করবেন।
* স্বাস্থ্যবান সুখী মানুষ কখনও অতীত বা ভবিষ্যতে বসবাস করে না। সে সব সময়ই বাস করে বর্তমানে।
* প্রার্থনা রোগের উপসর্গ কমায় এবং সুস্থতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
* রাগ-ক্ষোভ, ঈর্ষা, সন্দেহ দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করে। এগুলো ঝেড়ে ফেলুন, আপনার সুস্থ থাকার সামর্থ্য বেড়ে যাবে।
* উপদেশ-সম্পূর্ণ বিশ্রাম-৩-৭ দিন।
* মালিশ নিষেধ, এক বালিশ ব্যবহার করবেন, শক্ত ও সমান বিছানায় ঘুমাবেন, ফোম, জাজিম ব্যবহার, সামনে ঝোঁকা, ভারি কাজ, গরম সেঁক নিষেধ, নামাজ চেয়ার টেবিলে পড়বেন। উঁচু কমড ব্যবহার করবেন। নিচে বসা নিষেধ, সোজা হয়ে বসবেন। মগে গোসল করবেন না, শাওয়ার ব্যবহার করবেন, কোমরে বেল্ট (করসেট) পরবেন, যার ঘাড়ে সমস্যা তারা কলার ব্যবহার করবেন।

আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ প্রিয়দেশ
Theme Customized BY LatestNews